ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

শিশুদের জন্য প্রকৃতির কাছে ক্ষমা চাই 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:২৯, ৭ জুন ২০২০ | আপডেট: ১১:৫৮, ৮ জুন ২০২০

আমরা যেন বনকে উজার না করি,পুড়ে ছাই না করি । বনের ভেতর প্রাণী থাকে । সবুজ গাছপালা থাকে । জীবন ধারণের উপাদান থাকে। অক্সিজেন থাকে।

জীব বৈচিত্র্য থাকে। আমাজান রেইন ফরেস্ট যেদিন পুড়ে গিয়েছিল সেদিন মনে হয়েছিল পৃথিবীর ফুসফুস পুড়ে গেছে। 
প্রকৃতি ও মানুষের মধ্যে যে সুনিবিড় সম্পর্ক তা বাঁচিয়ে রাখতে হবে। মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্কের গভীরতা উপলুব্দি করতে হবে। মানুষের সাথে প্রকৃতির ভালবাসার সেতুবন্ধন রচনা করতে হবে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কবিতায় প্রকৃতির বন্দনা করেছেন। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের বর্ণনা তাঁর রচিত আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ায় এবং দুই বিঘা জমি কবিতায়-নমো নমো নম, সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি গঙ্গার তীর, স্নিগ্ধ-সমীর, জীবন জুড়ালে তুমি...কী অপূর্ব চিত্রকল্প অঙ্কন করেছেন।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চাঁদনী রাতে,আগমনী,অঘ্রাণের সওগাত কবিতায় প্রকৃতি প্রেম খুঁজে পাওয়া যায়। 

রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের  কবিতায় প্রকৃতি প্রেম গভীরভাবে প্রোথিত। জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিব ফিরে’ এবং ‘বনলতা সেন কবিতায়’ প্রকৃতির নান্দনিক রূপ ফুটে ওঠেছে। 
জীবনানন্দ দাশ তাঁর শঙ্খমালা কবিতায় 
শঙ্খমালাকে খুঁজেছেন নক্ষত্রে,সন্ধ্যার নদীর জলে,জোনাকির দেহে,ধানক্ষেতে, অঘ্রাণের অন্ধকারে। জীবনানন্দ দাশ তাঁর প্রিয়তমাকে খুঁজে পেয়েছিলেন প্রকৃতির মাঝে।

পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের নকশিকাঁথার মাঠ, শামসুর রাহমানের এই সন্ধ্যে বেলা, নির্মলেন্দু গুণের কাশফুলের কাব্য প্রকৃতি প্রেমের কবিতা। 

প্রকৃতিকে ভালবাসতে হবে প্রিয়তমার মতো। প্রকৃতিকে ধ্বংস করা যাবে না।
প্রকৃতির ওপর আধিপত্য নয়,নয় কোন বৈরিতা। প্রতিকূল পরিবেশে টিকতে না পেরে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ডাইনোসররা। 

বর্তমান সময় করোনা মানব সভ্যতার জন্য এক নির্মম রূঢ়তা,মনে হয় যেন প্রকৃতির প্রতিশোধ। 
বিভিন্ন সময় প্রকৃতি তার রূদ্র রূপ ধারণ করে। সম্প্রতি আম্পানের ভয়ংকর রূপ দেখেছে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। গোটা পশ্চিমবঙ্গ আম্পানে বিধ্বস্ত। আম্পানের দানবীয় তাণ্ডবে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে জীবন যাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়েছিল। বিদ্যুৎ পরিষেবা অনেক জায়গায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অধিকাংশ এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছিল। 

অপরিকল্পিত নগরায়ন,
নদ-নদী দখল-ভরাট-দূষণ মানব সভ্যতার জন্য হুমকি। মানব সভ্যতার ভারসাম্য রক্ষার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। পানি ও বায়ু দূষণ, শিল্পকারখানার দূষণ থেকে পরিবেশকে বাঁচাতে হবে। অবাধে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। বৃক্ষরোপন করতে হবে। সবুজ পৃথিবী গড়তে হবে।  

আমরা প্রকৃতির কাছে আবার নানাভাবে ঋণী। প্রকৃতির কাছে এই ঋণ অপরিশোধিত। তাই প্রকৃতির সাথে মানুষের কোন নিষ্ঠুর আচরণ নয়। 
অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে প্রকৃতির ওপর কোন শাসন নয়,অত্যাচার নয়। ভালো থাকুক নদ-নদী,হাওর,ফুল,পাখি,বৃক্ষ,পাহাড়,ঝর্ণা,সমুদ্র,বিস্তৃত সোনালী ফসলের মাঠ আর সবুজ বনভূমি। 

প্রকৃতিপ্রেমী কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ এর আই ওয়ান্ডারড লোনলি অ্যাজ আ ক্লাউড কবিতার মতো প্রকৃতিকে দেখতে হবে।
প্রকৃতিকে দেখতে হবে চির সৌন্দর্যের কবি জন কিটসের চোখ দিয়ে। 

বরেণ্য গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গির লেখা গানের মতো বলতে চাই-
‘আজ যে শিশু পৃথিবীর আলোয় এসেছে। আমরা তার তরে একটি সাজানো বাগান চাই। আজ যে শিশু মায়ের হাসিতে হেসেছে আমরা চিরদিন সেই হাসি দেখতে চাই’। 

প্রকৃতির অভিশাপ নয়, আশির্বাদ চাই। পৃথিবীর আলোয় আসা শিশুর জন্য প্রকৃতির কাছে ক্ষমা চাই। প্রতিটি শিশু যেন আনন্দময় পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে। নির্মল বাতাসে বুকভরে নিঃশ্বাস নিতে পারে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ফুটে উঠুক প্রতিটি শিশুর হাসিতে।

লেখক : সুজন হাজং,গীতিকার
একে//


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি